মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৪৬ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
মার্কিন পতাকা নামিয়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে উড়লো ফিলিস্তিনি পতাকা! বিএনপি সাংগঠনিকভাবে আরও দুর্বল হচ্ছে: ওবায়দুল কাদের বিষয়টি আদালতেই সুরাহার চেষ্টা করব, হাইকোর্টের নির্দেশনা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী গাজার ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা করতে সৌদিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশের সর্বোচ্চ ৪৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড চুয়াডাঙ্গায় দেশ থেকে আইনের শাসন উধাও হয়ে গেছে : মির্জা ফখরুল স্বর্ণের দাম ভরিতে কমলো ১১৫৫ টাকা তীব্র তাপপ্রবাহ : স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখতে নির্দেশ হাইকোর্টের মঙ্গলবারও ঢাকাসহ ২৭ জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যাঞ্চলে টর্নেডোর আঘাতে নিহত ৫
ভিসির ‘জয় হিন্দ’ স্লোগানের ব্যাখ্যা দিলো রাবি প্রশাসন

ভিসির ‘জয় হিন্দ’ স্লোগানের ব্যাখ্যা দিলো রাবি প্রশাসন

স্বদেশ ডেস্ক:

মুক্তিযুদ্ধকালে সহযোগিতার জন্য ভারত রাষ্ট্রের দীর্ঘায়ু কামনা করতে গিয়েই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভিসি অধ্যাপক আব্দুস সোবহান অতি প্রাসঙ্গিকভাবেই ‘জয় হিন্দ’ শব্দযুগল ব্যবহার করেছেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

সোমবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রভাষ কুমার কর্মকার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, গত ৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে রাবি ইতিহাস বিভাগ ও জন ইতিহাস চর্চা কেন্দ্র আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ‘কালচার, পিস অ্যান্ড এডুকেশন; ফ্রম দ্যা পারস্পেকটিভ অভ পিপলস হিস্ট্র্রি’ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সভাপতির বক্তৃতায় ভিসি অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান ‘জয় হিন্দ’ বলেছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সংবাদটি অত্যন্ত চতুর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিকৃত করে উপস্থাপনের মাধ্যমে দেশে বিরাজমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা করা হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ মনে করে।

এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (বিমক)-এর মাননীয় চেয়ারম্যান বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ প্রফেসর কাজী শহীদুল্লাহ। সম্মেলনে ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধশতাধিক ইতিহাসবিদসহ রাজশাহীতে নিযুক্ত ভারতের সহকারী হাইকমিশনার সঞ্জীব ভাটিও উপস্থিত ছিলেন।

ভিসি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সর্বাঙ্গীন সহযোগিতা, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধকালীন এক কোটি শরণার্থীর খাদ্য-বাসস্থানের যোগান দান, মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সহযোগিতাকরণ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অকুণ্ঠ সমর্থন জ্ঞাপন, সর্বোপরি বিশ্বজনমত সৃষ্টির দ্বারা স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানি কারাগার থেকে মুক্তকরণে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী ও তার সরকারসহ সে দেশের জনগণের প্রতি অকৃত্রিম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তাঁদের এই সহযোগিতার জন্য ভারত রাষ্ট্রের দীর্ঘায়ু কামনা করতে গিয়ে ভিসি মহোদয় অতি প্রাসঙ্গিকভাবেই ‘জয় হিন্দ’ শব্দযুগল ব্যবহার করেন এবং তা তিনি ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ উচ্চারণের পর বলেন।

কিছু স্বার্থান্বেসী মহল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরাজমান স্থিতিশীল অবস্থা ও দেশের সার্বিক উন্নয়ন-অগ্রগতি রোধে বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টির লক্ষ্যে এই ধরনের বিভ্রান্তি ও সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে বলে প্রতীয়মান হয়। ভবিষ্যতে সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে ঘটনা প্রবাহ ও তার প্রেক্ষিত, প্রাসঙ্গিকতা ও প্রকৃতি বিচার করার জন্য পরামর্শ প্রদান করা যাচ্ছে। কেননা বিষয়গুলো বস্তুনিষ্ঠ ও স্বচ্ছ সংবাদ পরিবেশনের অনুসঙ্গ।

এদিকে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানের পর ‘জয় হিন্দ’ বলায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক এনামুল হক বলেন, ‘বিশ^বিদ্যালয়ের একজন ভিসির এমন বক্তব্য আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। ভারতের স্লোগান দেয়া এটি অদূরদর্শিতা ছাড়া কিছুই নয়। তিনি এই বিশ^বিদ্যালয়ের যদি শিক্ষক থাকতেন তাহলে তিনি এমন বক্তব্য দিতেন না। তিনি (ভিসি) তো এই বিশ^বিদ্যালয়ের একজন প্রশাসক হিসেবে আছেন। তাই এই পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। অবিলম্বে তার পদত্যাগ করা উচিত। বর্তমান সরকার এটা অবশ্যই ভাববেন বলে আমরা আশাবাদী।

বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন ক্যাম্পাসে ছাত্র সংগঠনের নেতারা। তারা বলছেন, এ ধরনের স্লোগান স্বাধীনতাবিরোধী। বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের রাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক মহব্বত হোসেন মিলন বলেন, ভিসির এমন বক্তব্য মুক্তিযুদ্ধকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। অন্য দেশের স্লোগান দিয়ে জাতির সাথে বেঈমানি করেছে। তিনি যদি মাফ না চান তাহলে শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে আন্দোলনে নামার হুশিয়ারি দেন তিনি।

বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ রাবি শাখার আহ্বায়ক মাসুদ মোন্নাফ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় জাতির পথ দেখায়। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ভিসির এমন বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল। সিনেটের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ‘জয় হিন্দ’ বলে তিনি সেই বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশকে খাটো করেছেন। তাই তিনি এই পদে থাকার নৈতিকতা হারান। তার বিরুদ্ধে মামলা হওয়া উচিত।’

রাবি ছাত্রদলের যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক সানিন চৌধুরী বলেন, ‘একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির এমন বক্তব্য স্বাধীনতায় কুঠারাঘাত। আমরা অনতিবিলম্বে তার অপসারণের দাবি জানাচ্ছি।’

এদিকে ভিসির বক্তব্য প্রত্যাহারের জন্য ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে রাকসু আন্দোলন মঞ্চ, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন ও সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাকর্মীরা। বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে শিক্ষার্থীরা তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হবে বলে হুশিয়ারী দেন তারা।

রাবি ভিসিকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি সাদা দলের
রাবি ভিসি কর্তৃক অখণ্ড ভারতের জয়ধ্বনি দেয়ার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী শিক্ষক গ্রুপ সাদা দল। সাদা দলের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক অধ্যাপক ড. মোহা: এনামুল হক স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এ ধৃষ্টতা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। এর মধ্যে দিয়ে তিনি তার পদের চরম অবমাননা ঘটিয়েছেন এবং ওই পদে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন। সুতরাং অবিলম্বে তাকে জাতির সামনে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানাই এবং সেইসাথে আইনের আওতায় এনে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকা-ের জন্য তার যথাযথ শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। আমরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করছি, একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক একজন ভিসি কিভাবে আধিপত্যবাদী আরেকটি দেশের জন্য জয়ধ্বনি দিতে পারে! এটা এদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য চরম অবমাননাকর। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয় তিনি বাংলাদেশের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব এবং রাষ্ট্রীয় সত্বা বিরোধী ব্রাহ্মণ্যবাদী ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে মিলে দেশবিরোধী চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছেন। অখণ্ড ভারতের শ্লোগান দিয়ে তিনি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির গোলাম হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। তিনি ক্ষমা না চাইলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে।

এ বিষয়ে জানতে ভিসি অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানের সাথে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ সেপ্টেম্বর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে ‘কালচার, পিস অ্যান্ড এডুকেশন : ফ্রম দ্যা পারস্পেকটিভ অভ পিপলস হিস্ট্রি’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্যের শেষে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানের পর ‘জয় হিন্দ’ বলেছেন ভিসি অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877